Thursday, March 30, 2017

জেনে নিন, ফিটকিরির আজব কিছু গুণ!



জেনে নিন, ফিটকিরির আজব কিছু গুণ!

ফিটকিরি একটি রাসায়নিক যৌগ। ফিটকিরির ইংরেজি নাম এলাম দাড়ি কাটতে গিয়ে ব্লেডে গালটা আচমকা কেটে গেলে, স্যাভলন বা কোনও আফটার সেভের খোঁজ পড়ত না। হাতের কাছে থাকা ফিটকিরির ডেলা গালে ঘষে নিতেন। ব্যস, রক্ত বন্ধ।



আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে ফিটকিরি নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে । এই ফিটকিরির আজব কিছু গুণ দেখে নিন-



১।টনসিলে আরাম:

ঠান্ডা লেগে গলায় ব্যথা হলে বা গ্ল্যান্ড ফুললে, গরম জলে এক চিমটে লবণফিটকিরি চূর্ণ মিশিয়ে, দিনে কয়েকবার গার্গেল করুন। স্বস্তি পাবেন।



২।মুখের ঘা এ উপশম :

অনেক সময় মুখের চারপাশে ঘা হয়। এই ঘা এর 

উপশমও ফিটকিরি করতে পারে। মুখের ঘাতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম- ১ চামচ ফিটকিরির গুড়াঁ ও ১ গ্লাস পানি নিন। পানি একটা পাত্রে চুলায় দিন। ফুটে উঠলে ফিটকিরির গুড়াঁ মিশিয়ে নিন ও চুলা বন্ধ করে নিন। পানি কুসুম গরম অবস্হায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার এটা দিয়ে কুলকুচি করে নিন, দিনে ২-৩ বার করুন, আরাম পাবেন।



৩।হঠাৎ রক্ত:

ফিটকিরি ত্বকের যত্নে আ্যাসটিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে। দাড়ি কাটতে গিয়ে গালটা কেটে গেলে, সেলুনে এখনও ফিটকিরি ঘষে দেয়। যদি, গাল কাটাই নয়, যে কোনও আঘাতে রক্তপাত হলে, সেখানে ফিটকিরির চূর্ণ করে দিয়ে দিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত বেরোনো বন্ধ হবে।


৪।ব্রণ দূর করতে :

প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ দূর করতে ফিটকিরি অত্যন্ত কার্যকর।মাত্র-৩ উপাদানেই তৈরি করুন ব্রণের জন্য ফেসপ্যাক।১ চা চামচ ফিটকিরির গুড়াঁ, ২ চা চামচ মুলতানি মাটি, ২ চা চামচ গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ব্রণে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন। ২ মাস নিয়মিত ব্যবহারে লক্ষণীয় উন্নতি দেখা যাবে।


৫।সর্বঘটের কাঁঠালি কলা:

আগে তো বাড়ির মেয়েরা রূপচর্চা করতেও ফিটকিরি ব্যবহার করতেন। তার কারণ, বলিরেখা পড়তে দেয় না। তা ছাড়া, যেহেতু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, তাই দাঁতের রোগেও কিন্তু ফিটকিরি ভালো কাজ দেয়।



৬।পানি বিশুদ্ধকরনে :

ফিটকিরির ব্যবহার পানি বিশুদ্ধকরনে খুব জনপ্রিয়। প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম ফিটকিরি বা ফিটকিরির গুঁড়া ব্যবহার করুন। ময়লা বা কাঁদাযুক্ত পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপরে দেখবেন কাঁদা সব নিছে জমা হয়েছে, এখন উপরে ভয়াল পানিতা আস্তে করে ছেঁকে নিন।



৭।আঙুলে হাজা:

অতিরিক্ত জল ঘাঁটার কারণে হাতে হাজা হলে, বা, পায়ের পাতা ফুললে, নিশ্চিন্তে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। এক টুকরো ফিটকিরি জলে ফেলে, জলটা ভালো করে গরম করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে, পা চুবিয়ে রাখুন। দুরন্ত আরাম পাবেন।



৮।পা ফাটা উপশমে : 

ফিটকিরি খুব দক্ষতার সঙ্গে পা ফাটা আরোগ্য করতে পারে। পায়ের মরা চামড়া তুলে পা কে নরম ও মসৃণ করে তোলে। পায়ের ফাটা ভালো করতে একটা প্যাক তৈরি করুন। একটা বাটিতে ২ চা চামচ ফিটকিরি গুঁড়া , ১ চা চামচ নারিকেল তেল ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। পা ভালো করে ধুয়ে, শুকিয়ে নিন। এরপর প্যাক লাগিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ১০-১৫ রেখে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।



৯।ব্রন-ফুসকুড়ি:

মুখে ব্রন-ফুসকুড়ি হচ্ছে? মুখ ড্রাই হয়ে, চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে? চিন্তা করবেন না। ভালো করে মুখ ধুয়ে নিয়ে, সারা মুখে অনেকক্ষণ ধরে ফটকিরি ঘষুন। বা ফিটকিরি চূর্ণ জলে গুলে, মুখে মাখুন। শুকিয়ে গেলে, কিছুক্ষণ পর মুখটা ধুয়ে ফেলুন। এ ভাবে কিছু দিন করলে, মুখে ঊজ্জ্বলতা ফিরবে। ব্রন-ফুসকুড়ির হাত থেকেও মুক্তি পাবেন।



১০।উকুন ধ্বংসে :

চুলে উকুন হয়েছে? চিন্তা নেই, ফিটকিরিই দূর করে দিবে উকুন। ১/২ লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ফিটকিরি মিশিয়ে নিন। এবার মাথার তালুতে লাগান। ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ /২ দিন ব্যবহার করুন।



১১।বলিরেখা দূর করতে : 
ফিটকিরি ত্বককে টানটান করতে সাহায্য করে। ১চামচ ফিটকিরির গুড়াঁ ও ২ চামচ গেলাপজল বা পানি মিশিয়ে মুখে লাগান ( চোখ বাদে)।  কিছুক্ষণ পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ফিটকিরির গুড়াঁ না থাকলে, একটা ফিটকিরির টুকরা ভেজা মুখে ঘষুন। কিছু সময় পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের বলি রেখা দূর করে, আপনাকে করে তুলবে সতেজ ও লাবন্যময়ী।


১২।ডিওডেরেন্ট হিসেবে :

ফিটকিরি বা ফিটকিরির গুঁড়া শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। এটাকে প্রাকৃতিক ডিওডেরেন্ট বলা যায়। ফিটকিরির টুকরা ভিজিয়ে আন্ডারআর্ম বা বগলে ঘষুন, ২ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। অথবা গোলাপজলের সাথে ফিটকিরির গুঁড়া মিশিয়ে বগলে লাগান। ৫-১০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। তবে প্রতিদিন ব্যবহার না করে সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।



১৩।ক্রিয়াবিদের পায়ের যত্নে :

ফিটকিরিতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবাইয়াল উপাদান। এটা ক্রিয়াবিদের পায়ে ফাঙ্গাসকে মেরে ফেলে। একারনে ক্রিয়াবিদের পায়ের যত্নে ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। গোলাপজলের সাথে ফিটকিরির গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে পা ও পায়ের পাতাতে লাগিয়ে রাখুন। শুকালে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। অন্যভাবে, হালকা গরম পানিতে ফিটকিরির গুঁড়া মিশিয়ে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে পা ধুয়ে, মুছে নিন।

 



১৪।ঘেমে যানঃ



গরমে ঘাম তো হবেই। কিন্তু, যাঁরা খুব বেশই ঘামেন, পরনের জামা চুপচুপে হয়ে ভিজে যায়, তাঁদের এই বিরক্তিকর অবস্থার হাত থেকে স্বস্তি দিতে পারে এক টুকরো ফিটকিরি। চানের সময় এক টুকরো ফিটকিরি জলে ভালো করে মিশিয়ে, গায়ে ঢেলে দিন। কিছু দিন এ ভাবেই স্নান করুন। স্বস্তি মিলবে।



১৫।ডার্ক সার্কেল দূর করতে : 
চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে ১ চামচ ফিটকিরির গুড়াঁ ও ২ চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এখন চোখের নিচে লাগিয়ে ৪/৫ মিনিট পরে ধুয়ে মুখ ফেলুন। তবে খুব সাবধান চোখের ভিতরে যেন না যায়, তা হলে চোখ জ্বালা করবে।
১৬।দাঁতে যন্ত্রণা:
দাঁতের যন্ত্রণায় ভুগেছেন? বা, মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে? সব মাজনে চেষ্টা করেও, মুখের গন্ধ যাচ্ছে না? তাই কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না? আপনাকে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে ফিটকিরি। গরম জলে ফিটকিরি গুলে নিয়ে, কুলকুচি করুন। আপনি দাঁতের যন্ত্রণার হাত থেকে নিশ্চিতভাবেই মুক্তি পাবেন। মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে লজ্জায় পড়তে হবে না।

0 comments: