চিকেন পক্স
(Chicken Pox) বা
জলবসন্তের দাগ খুব সহজে দূর করার উপায়
আমরা
ইতিপূর্বে এই অধ্যায়ে চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ,
কেন হয় ? চিকেন
পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্ত রোগ হলে চিকিৎসা, প্রতিরোধের জন্য কি
কি টিকা নেওয়া যেতে
পারে? সতর্কতা কি কি? এই রোগ হলে কি কি খাবার খেতে হয়?
এখন আমরা জানব-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে ত্বকের সবচাইতে বিরক্তিকর সমস্যা হচ্ছে সেরে যাবার পর চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্তের কারণে শরীরে দেখা দেয় অজস্র কালো দাগ। চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত সেরে যাবার পর
পরই দাগ গুলো রিমুভ করতে হয়,
তা না হলে অনেক
সময় দাগগুলো চিরস্থায়ী
হয়ে যায়। কারও
কারও ক্ষেত্রে তো দাগ চলে গেলেও ওই স্থানে গর্তের আকার তৈরি হয়। সাধারণত
এটি অন্যান্য দাগের মতো নয় । চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে ত্বকে কালো কালো গর্তের সৃষ্টি হয় ।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত দাগ দূর করার সহজ কিছু প্রাকৃতিক উপায় জেনে নেই-
লেবুর
রস
লেবুর রসের
সাইট্রিক অ্যাসিড ব্লিচের মতো কাজ করে। প্রাকৃতিক ভাবে পক্সের দাগ দূর করার উপায়
হিসেবে, ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং জ্বালা-পোড়া কমানোর
জন্য লেবুর রস একটি অনন্য উপাদান। ১ চা চামচ লেবুর রস বের করে নিন। একটি তুলোর বল
এই লেবুর রসে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে ত্বকের উপরে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১০ থেকে ১৫
মিনিট এভাবে রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বকের দাগ
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। লেবুর রস ব্লিচিং গুন সম্বলিত; কারো ত্বক যদি
সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে লেবুর রস হালকা করে নেওয়া ভাল। এছাড়া প্রতিদিন অর্ধেক
লেবুর রস ২ টেবিল চামুচ পানির সাথে মিশিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে তা দাগের উপর
৩ থেকে ৪ মিনিট ঘষুন। এই প্রক্রিয়া অবশ্যই রাতে করতে হবে। কারণ দিনের বেলা সূর্যের
আলো লেবুর রসের সাথে রিআ্যাকট করে নতুন দাগের সৃষ্টি করবে।
সতর্কতা- চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেবুর রস ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন
নিয়মিত এই লেবুর রস ব্যবহারের কারণে আপনার ত্বক ফটোসেনসিটিভ হয়ে যায়, তাই রোদে
বেরুলে অবশ্যই ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
মধু
আয়ুর্বেদিক ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় মধু পক্সের দাগ দূর করার উপায় হিসেবে অনন্য
উপাদান। দাগের উপর নিয়মিত মধু লাগানো চিকেন পক্সের দাগের জন্য আরেকটি উপযুক্ত
ট্রিটমেন্ট। যত দিন না দাগ যাবে তত দিন খাঁটি মধু দিনে ৩ থেকে ৪ বার করে ত্বকের
দাগের উপর লাগিয়ে আলতো করে ঘষে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন ত্বকে কোনরূপ আঁচড় না পড়ে।
মধুর সাথে পেঁপের পেস্ট বানিয়ে অথবা মধু,
চন্দন ও গোলাপ
জল মিশিয়েও লাগাতে পারেন। ইহা ছাড়াও মধুর
সঙ্গে সামান্য ওটস
মিশিয়ে ব্যবহার করতে
পারেন। একটি
ঘন পেস্ট তৈরি
করে নিয়ে দাগের
উপর লাগিয়ে হাত
দিয়ে ঘষে নিন। ঘণ্টাখানেক সময়
এটি লাগিয়ে রাখুন। তারপর পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পাকা পেঁপে
পাকা পেঁপে, সামান্য দুধ ও ব্রাউন সুগার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে তা দাগের উপর লাগান। কয়েক মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। পেঁপে এবং মধুর পেস্ট এই দুটো উপাদানই দাগ নির্মূলে কার্যকরী। কারণ এরা এনজাইম, এমাইনো এসিড কনটেইন করে। পাকা পেঁপে আর মধু দিয়ে পেস্ট বানিয়ে দাগের উপর দিন দিনে ২ বার করে।
পাকা পেঁপে, সামান্য দুধ ও ব্রাউন সুগার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে তা দাগের উপর লাগান। কয়েক মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। পেঁপে এবং মধুর পেস্ট এই দুটো উপাদানই দাগ নির্মূলে কার্যকরী। কারণ এরা এনজাইম, এমাইনো এসিড কনটেইন করে। পাকা পেঁপে আর মধু দিয়ে পেস্ট বানিয়ে দাগের উপর দিন দিনে ২ বার করে।
ডাবের
পানি ও নারিকেলের তেল
শুধু চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত দাগ
কেন? স্কিনের
যেকোনো দাগ দূর করার জন্য প্রথমে যে জিনিসটির খুবই কার্যকর সেটি হলো ডাবের পানি।
ডাবের পানির সাইটোকিন ত্বকের ক্ষতি পূরণ করতে সহায়তা করে এবং দাগ দূর করে। বসন্ত
সেরে যাবার পর পরই প্রতিদিন তুলোর বলের মাধ্যমে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে দাগের উপর
ডাবের পানি লাগাবেন। আর এভাবে তত দিন করবেন যত দিন না স্কার গুলো ইনভিসিবল
হবে।ডাবের পানি আপনার ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। দিনে নিয়মিত কয়েক বার ত্বকের
উপর ডাবের পানি প্রয়োগ করুন। ডাবের পানি পক্সের দাগ দূর করার উপায় হিসেবে
নিঃসন্দেহে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডাবের পানি বসন্ত সেরে যাওয়ার ঠিক পরপরই ২
গ্লাস ডাবের পানি গোসলের পানিতে মিশিয়ে নেবেন। প্রতিদিন অন্তত ১ গ্লাস ডাবের পানি
পানের চেষ্টা করবেন।
মুখের দাগের উপর প্রত্যেকদিন নারকেলের তেল লাগান দিনে ৩ থেকে
৪ বার। আলতো করে ম্যাসাজ করে নিন। এতে কার্যকরী ফল পাবেন।
ইহা ছাড়াও
এই পদ্ধতি তাদের
জন্য যাদের দাগ অনেক আগেই হয়েছে কিন্তু এখনো সে দাগ দূর হয়ে যায়নি। প্রতিদিন
সকালে নিয়মিত দাগের উপর নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত কারণে
যে দাগ হয়েছে সেটি দূর করার জন্য গাঁদা ফুলের তুলনা নেই। ।এক কাপ পানিতে ২ টেবিল
চামুচ গাঁদা ফুল সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকালে এটি পেস্ট করে নিন এবং দাগের
উপর মাখুন। খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন অনাকাঙ্ক্ষিত এই দাগ গুলো থেকে।
গাজর
ও ধনেপাতা
শুধু বাহ্যিক নয় অভ্যন্তরীণ থেকেও চিকেন পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্ত দাগ নির্মূল করা যায়। ১০০ গ্রাম গাজরের সাথে ৬০ গ্রাম
ফ্রেশ ধনে পাতা দিয়ে স্যুপ বানিয়ে ফেলুন। তারপর দিনে ২ বার করে সেবন করুন। এতে
আপনার দাগ দূর হবে সঙ্গে চিকেন পক্সের ট্রিটমেন্টেও কাজে লাগবে।
রসুন
চিকেন
পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্তর সময় রসুন খেতে হয়ত মানা কিন্তু মুখের
দাগ মুছে ফেলতে তো মানা নেই। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন রাতে কাঁচা রসুন দাগের ওপর
লাগাবেন।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডার
আ্যালকালিন উপাদান ত্বকের পিএইচ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যার এসিডিটি খুব নিচু
স্তরের। ২ চামুচ বেকিং সোডা এক গ্লাস সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে
ফেলুন। তারপর এই পেস্ট ত্বকে দাগ ও গর্তের সৃষ্টি যুক্ত স্থান গুলোতে লাগিয়ে আলতো
ঘষে নিন ১-২
মিনিট। পেস্ট শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে
ফেলুন। এভাবে নিয়মিত লাগান এটি ত্বক থেকে চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্তর দাগ
দূর করতে সহায়তা করে।
চন্দনের তেল
রূপচর্চার জন্য
অনেকেই এই চন্দনের তেল ব্যবহার করে থাকেন। ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে
চন্দনের তেল যেমন জাদু দেখায় তেমনি চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত জনিত
দাগ অদৃশ্য করতে চন্দনের তেলের গুরুত্ব অপরিসীম । চন্দন তেলের
সাথে চাইলে ভিটামিন ই অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারবেন।
ইহা ছাড়াও ১০০
গ্রাম গাজরের সঙ্গে ৬০ গ্রাম ফ্রেশ ধনে পাতা দিয়ে স্যুপ তৈরি করে ফেলুন । তারপর ২
বার করে দিনে সেবন করুন । এতে আপনার দাগ দূর হবে সাথে চিকেন পক্সের চিকিৎসাও কাজে
লাগবে ।
অ্যালোভেরার
পাতা
চিকেন
পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্তর দাগ দূর করার উপায় হিসেবে অ্যালোভেরা
বিশেষভাবে কার্যকর। অ্যালোভেরা কাঁচা পাতা নিন। পাতার ভেতরে থাকা জেল বেড় করে
ত্বকের লাল ভাব, দাগের গভীরতা, ডার্ক স্পটের উপরে লাগিয়ে কয়েক মিনিট রেখে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে
দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যে দাগ গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এছাড়া মধুর
সঙ্গে সামান্য অ্যলো
ভেরার জেল মিশিয়ে
দাগের উপর লাগাতে
পারেন। প্রত্যেকদিন
এটির ব্যবহারে ভাল
ফল পাবেন।
ল্যাভেন্ডার অয়েল
ত্বক থেকে চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্তর দাগ তাড়াতাড়ি মেটাতে ব্যবহার করতে পারেন ল্যাভেন্ডার
অয়েল। এই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন কোনো ভেষজ তেল। প্রত্যেকদিন দাগের উপর এই
মিশ্রণ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
ওটস
আধা কাপ ওটমিলের সাথে এক কাপ গরম পানি নিন। সেই মিশ্রণটিকে কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত দাগের উপর লাগিয়ে নিন। মিশ্রণটি ১০ মিনিট লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন এটির ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য ফল পাবেন।
আধা কাপ ওটমিলের সাথে এক কাপ গরম পানি নিন। সেই মিশ্রণটিকে কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত দাগের উপর লাগিয়ে নিন। মিশ্রণটি ১০ মিনিট লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন এটির ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য ফল পাবেন।
কোকোয়া বাটার
মুখে সামান্য কোকোয়া বাটার লাগিয়ে আলতো হাতে ম্যাসাজ করে নিন। ৩ থেকে ৪ দিন এটির ব্যবহারে দারুণ ফল পাবেন।
মুখে সামান্য কোকোয়া বাটার লাগিয়ে আলতো হাতে ম্যাসাজ করে নিন। ৩ থেকে ৪ দিন এটির ব্যবহারে দারুণ ফল পাবেন।
ভিটামিন
(K) কে জাতীয় খাবার
ভিটামিন (K) কে চিকেন পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্তর দাগ দূর করার উপায়; শুধু তাই নয়, ত্বকের প্রতিরক্ষা এবং পরিচর্যা করতেও
ভিটামিন (K) কে এর ভূমিকা
অপরিসীম। ভিটামিন (K) কে স্কিনের জন্য উপকারী। তাই যে সকল
খাবারে ভিটামিন (K) কে প্রচুর
পরিমাণে থাকে সে সকল খাবার যেমন লিভার,
বাঁধাকপি, ব্রকোলি, টমেটো,
শালগম, দুধের তৈরি খাবার এবং চর্বিহীন মাংস খেতে হবে। শুধু মুখে বা শরীরে মেখে নয় চিকেন পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্তর দাগ দূর করার জন্য দৈনন্দিন খাওয়া
দাওয়ার ওপর নজর দিতে হবে। কারণ এরা শরীরের ক্ষত এবং দাগ থেকে ত্বক কে রক্ষা করে।
তাই প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি,
টমেটো, লিভার, স্পিনাচ,
লিন মিট, শালগম রাখুন। এছাড়া পানি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে
পানি পান করুন। শরীরে থাকা টক্সিন দূর তো হবেই সেই সঙ্গে চিকেন পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্তর দাগও দূর হবে। পানি সারকুলেশন ও কোলাজেন
উৎপন্ন বাড়িয়ে দেয়। ফলে আপনার স্কিন ইভেনলি টোনড থাকে। যখন স্কিন ইভেনলি টোনড
থাকে তখন স্কার একটু কমই ভিজিবল হয়।
চিকিৎসকের
পরামর্শ তো আছেই, তবে
ঘরোয়া পদ্ধতিও চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্তর দাগ হালকা করা সম্ভব। টমেটো ও লেবুর রস একটি পাত্রে নিংড়ে
তুলোর সাহায্যে দাগের ওপর লাগান।
সতর্কতা- খেয়াল রাখবেন
ত্বকের বাকী অংশে যেন কোনভাবেই মিশ্রণটি না লাগে।
0 comments: