চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ, কেন হয় ? এবং
সকল সমস্যার সমাধান ! বিস্তারিত দেখুন---
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এই ছয় ঋতুর
মধ্যে শেষ ঋতু হল ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের শেষে ও গরমের শুরুতে বসন্তকাল নিয়ে আসে কিছু
যান্ত্রণাদায়ক রোগবালাই। এর মধ্যে অন্যতম হলো চিকেন পক্স বা জলবসন্ত। বছরের যে
কোনও সময় হলেও সাধারণত বসন্ত কালেই সবচেয়ে
বেশি প্রাদুর্ভাব ঘটে- চিকেন পক্স (Chicken
Pox) বা জলবসন্ত।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত
একটি ভাইরাস জনিত রোগ। চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত অত্যন্ত সংক্রামক একটি
রোগ যা ভ্যারিসেলা জুস্টার ভাইরাস নামক এক ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমন হয়ে
থাকে। সব বয়সে চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শিশুরাই এই রোগের প্রধান স্বীকার
হয়ে থাকে। এই রোগটি খুব ছোঁয়াচেও। একজন থেকে খুব দ্রুত অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই
একজনের চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হওয়া মানে, তাঁর কাছের লোকজনদেরও
সাবধানে থাকতে হয়। সাধারণত কেউ একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে, জীবনে তার আর এ রোগ হয়
না বললেই চলে।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত রোগের পূর্ব লক্ষণ :-
·
সাধারণত
ভ্যারিসেলা জুস্টার ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১১ থেকে ২২ দিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ
দেখা যায় না। এ সময়ের মধ্যে ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করেই জ্বর
দিয়ে চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত লক্ষণ প্রকাশ প্রায়। শরীর ম্যাজম্যাজ, হালকা
ব্যথা, অল্প জ্বর থাকবে, গায়ে ছোট ছোট বিচি বা র্যাশ উঠবে। সাধারণত এ র্যাশ বুকে-পিঠে
দেখা যায়, তবে সারা শরীরেই উঠতে পারে। এ বিচিগুলোতে পানি থাকে, দেখতে অনেকটা ফোসকার
মতো। জ্বরের সাথে শরীর ব্যথা, গলাব্যথা, পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
·
দ্বিতীয়
দিন থেকে জ্বরের সাথে শরীরে, বিশেষ করে বুকে ও পিঠে বিশেষ ধরনের গুটি গুটি উঠতে শুরু
করে।
·
পরবর্তী
সময়ে তা বড় হয়ে কেন্দ্রে পানি জমা হয়। এর আবরণ খুব পাতলা হওয়ায় অল্পতেই ফেটে যেতে পারে।
·
এরপর
শরীরের বাইরের দিকের অঙ্গসমূহে (যেমন— হাত, পা, মুখ, মাথার ত্বক ইত্যাদি) গুটি উঠতে
শুরু করে, তবে হাত ও পায়ের তালুতে গুটি দেখা যায় না।
·
এসময়
পুরো শরীরে বিভিন্ন বয়সের গুটি থাকে। পরে তা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
·
সাধারনত
গুটিগুলো বেশ চুলকায়। চুলকালে গুটি ফেটে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে এবং পরে স্থায়ীভাবে
দাগ হয়ে যেতে পারে।
·
গুটি
ওঠার সময় এটি অন্যকে বেশি সংক্রামক হয়, তাই এ সময় রোদে, বাইরে না যাওয়া বা আক্রান্ত
ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। এই গুটি শুকানো পর্যন্ত অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত রোগ ছড়ার কারণ :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত
অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় এটি খুব সহজেই একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যেমন- আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে, আক্রান্ত রোগীর ব্যবহূত জিনিস স্পর্শ করলে,
আক্রান্ত রোগীর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে, আক্রান্ত রোগীর হাঁচি ও কাশি থাকে এ রোগটি
ছড়াতে পারে। যেহেতু, ভ্যারিসেলা জুস্টার নামক ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। সুতরাং, ভাইরাসটি
দেহে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই কোন লক্ষণ দেখা যায় না। ভ্যারিসেলা জুস্টার ভাইরাস
শরীরে প্রবেশ করার ১৪ থেকে ২১ দিন পর ধীরে ধীরে পক্সের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে,
তাই আক্রান্ত রোগীর শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার ৫ দিন আগে থেকে এবং ফুসকুড়ি শুকিয়ে যাওয়ার
পরবর্তী ৬ দিন সময়ের মধ্যে কেউ সংস্পর্শে এলে তারও চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা
জলবসন্ত হতে পারে। বুকে-পিঠে
হবে বেশি। এ ছাড়া হতে পারে মুখগহ্বরের ভেতরে, চোখে, যোনিপথে, হাতে-পায়ের তালুতে ও
মাথায়।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত রোগ হলে চিকিৎসা :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত
খুব সাধারণ অসুখ হলেও খুব বিরক্তিকর, অস্বস্তিজনক ও যন্ত্রণাদায়ক। রোগীর প্রচুর
যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে শিশুর
স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যান, পুষ্টি নিশ্চিত করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন,
চুলকানি বা ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করানো যাবে। কখনোই
অ্যাসপিরিন-জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। এতে ‘রিই সিনড্রোম’ নামক জটিল সমস্যা হতে
পারে। অ্যান্টিবায়োটিক আদৌ লাগবে কি না সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
আক্রান্ত শিশুকে র্যাশ দেখা যাওয়ার ছয় দিন পর্যন্ত স্কুলে না পাঠানোই উচিত। এ
কারণেই চিকেন পক্সের ফুসকুড়িগুলো শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকাটাই
বুদ্ধিমানের কাজ। শরীরে র্যাশ দেখা যাওয়ার দুই দিন আগে থেকে তিন থেকে সাত
দিন পর পর্যন্ত রোগজীবাণু ছড়াতে পারে।
জলবসন্ত প্রতিরোধের জন্য টিকা নেওয়া যেতে
পারে-
### জলবসন্তের কার্যকর টিকা রয়েছে। দামি হলেও এটি নিরাপদ। শিশুদের ক্ষেত্রে, ১২ থেকে ১৫ মাস
বয়সে প্রথম ডোজ ও ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।
### ১২ বছর বয়স পর্যন্ত এক ডোজ, ১৩ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে, ৪
থেকে ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ নিতে হবে। সংস্পর্শ ঘটার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে
ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সুফল মেলে। কিন্তু গর্ভবতী মা এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তির
ক্ষেত্রে এ টিকা নেওয়া যাবে না।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত রোগ হলে সতর্কতা :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত
ভাইরাসের দ্বারা সৃষ্ট অস্বস্তিকর অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ এটা
আমরা সবাই জানি। তবে
অনেক ক্ষেত্রে গুটি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে আবার নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস,
মস্তিষ্কে প্রদাহ, কিডনির প্রদাহ, ত্বকের প্রদাহ, অস্থিসন্ধির প্রদাহ ইত্যাদি হতে
পারে। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে, জলবসন্ত গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটির কারন হতে পারে।
আবার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে কিংবা কোন ওষুধের কারনে শরীরে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এ রোগটিও মারাত্মক হতে পারে।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে কিছু
সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
১। পর্যাপ্ত পানি পান করা :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে
জ্বর আসে এবং ক্ষুধা কমে যায় বলে পানি পান করা হয় কম। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা
কমানোর জন্য এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য হাইড্রেটেড থাকাটা জরুরী।
এজন্যই পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
২। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে
সারা শরীরে তরলে পরিপূর্ণ ফুসকুড়ি থাকে বলে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।
সঠিক হাইজিন মেনে না চললে ফুসকুড়িগুলো ফেটে যদি তরল বেরিয়ে যায় তাহলে ব্যাকটেরিয়ার
সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই এই সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে
চলা অনেক প্রয়োজনীয়। ত্বক চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ভুলক্রমে চুলকে ফেললেও
হাত ধুয়ে ফেলতে হবে তাড়াতাড়ি।
৩। ফ্রিজের খাবার এড়িয়ে চলা:-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে
শরীরে অনেক তাপ উৎপন্ন হয় বলে ঠান্ডা অথবা ফ্রিজের খাবার খেলে কিছুটা উপশম হয় বলে
মনে করা হয়। যদিও এটি করলে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ইনফেকশন শরীরে ছড়িয়ে
পড়লে এমন হয়। তাই ঠান্ডা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
৪। নিজে ঔষধ সেবন না করা :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত রোগীদের
জ্বর থাকে বলে নিজে নিজেই অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ সেবন করাটা ঠিক নয়। কারণ এর ফলে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ীই ঔষধ গ্রহণ করতে
হবে এবং ফলোআপে থাকতে হবে।
৫। অন্যের সাথে পোশাক শেয়ার করা :-
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত যেহেতু
একটি অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি তাই এই রোগে আক্রান্তদের ব্যবহার্য জিনিসের
সংস্পর্শে আসলে সুস্থ ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই রোগীর জামাকাপড়, তোয়ালে বা চাদর এগুলো যেন অন্য কেউ ব্যবহার না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে
হবে।
৬। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না :-
অনেকে কিছু হলেই নিজেই
ওষুধ খেয়ে নেন। কিন্তু
সেই কাজ একদম করবেন
না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন
না।
এছাড়াও কিছু ব্যপারে
সতর্কতা অবলম্বন করলে রোগীর জন্য তা আরামদায়ক বা স্বস্তিদায়ক হতে পারে। যেমন-
• জ্বর বা
ব্যথার কারণে অস্বস্তিবোধ হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। আবার শিশুর বয়স দু
বছরের কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ৷
·
মুখে
ক্ষত হলে নরম খাবার খেতে হবে। এবং ঝাল, লবণ ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
·
রোগীর
ত্বক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রতিদিন রাতে শোবার সময়, সারাদিনের পরা পোশাক
পরিবর্তন করে নতুন পোশাক পরিয়ে দিতে হবে এবং বিছানার চাদর পরিবর্তন করতে হবে।
·
হালকা
পোশাক শরীরের জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক। তাই, টাইট কাপড়চোপড় না পরে সুতি ঢিলেঢালা
জামা কাপড় এবং রাতে পায়জামা পরলে স্বস্তিবোধ হবে।
• রোগীকে শরীর
ঠান্ডা করুন রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য এতে রোগী আরাম বোধ করবে ৷ তবে
খেয়াল রাখবেন পানি যেন বেশি ঠান্ডা না হয় ৷
• রোগীকে একটা
ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে ত্বক মুছে দিতে পারেন কিংবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে পারেন
৷ এতে তার ত্বক সজীব এবং পরিষ্কার থাকবে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
তাই, রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং প্রতিদিন রাতে শোবার সময় পরনে থাকা জামা
কাপড় পাল্টে পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে ৷
• শরীরে
চুলকানি হতে পারে কিন্তু শরীরে চুলকানো যাবে না। এটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে।
কারণ- চুলকানোর ফলে ক্ষত হবে এবং ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে। আবার সংক্রমণও
হতে পারে। তারপরেও খুব বেশি চুলকানি হলে রোগীকে একটা ঠান্ডা, ভেজা নরম কাপড় দিতে
হবে যাতে সে তা দিয়ে আস্তে আস্তে ফোস্কার ওপর ঘষতে পারে৷ এটা ফোস্কা না ফাটিয়ে
ত্বককে ক্ষতের হাত থেকে রক্ষা করবে। আবার অতিরিক্ত চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য
অ্যান্টিহিস্টামিন নামক মুখে খাওয়ার ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এটি চুলকানি কমানোর
পাশাপাশি ঘুমের জন্যও ভাল। এতে রোগীর চুলকানিও কমবে আবার বিশ্রামও হবে।
·
নখ
ছোট রাখলে সংক্রমন প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্ষত হওয়ার হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে, নিয়মিত অর্থাৎ সপ্তাহে দুইবার নখ কেটে দিতে হবে।
• শিশুদের
ক্ষেত্রে, জলবসন্তে আক্রান্ত হলে তার আঙুলের নখ ছোট করে কেটে দিতে হবে৷ এমনকি অসুখ
সেরে যাবার পরও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত তার নখ প্রতি সপ্তাহে দুবার কেটে দিতে হবে।
এতে সে নখ দিয়ে চুলকালেও ত্বকে দাগ পরবে না এবং জীবাণুর সংক্রমণও কম হবে।
• ত্বকে
সংক্রমণের চিহ্ন দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। পক্সের
চারপাশে লাল হলে বা পক্সের মুখে পুঁজ হলে, সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগাতে হবে।
• যার চিকেন
পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হয়েছে কিংবা সম্প্রতি জলবসন্ত থেকে সেরে উঠেছে এদের
সবাইকে সূর্যালোকের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে। কারন- একবার জলবসন্ত হবার পর
ত্বক প্রায় একবছর পর্যন্ত অরক্ষিত অবস্থায় থাকে এবং সূর্যালোকে সহজেই পুড়ে যেতে
পারে। এসকল ক্ষেত্রে, ঘরের বাইরে বেরোনোর সময় সমস্ত শরীরে ভালভাবে সানস্ক্রিন মেখে
নিলে ভাল উপকার পাওয়া যাবে।
• চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্তের
সংখ্যা অনেক বেশি হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হ
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে খাবার :-
- চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগে শরীরে পানির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তাই শিশুকে এই সময় প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, শরবত, স্যালাইন এসব খাওয়াতে হবে।
- এই সময় শরীরে প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায় কারণ শরীরকে অনেক দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবারগুলোকে বেশি বেশি করে খেতে দিন।
- বেশি তেল মশলাযুক্ত খাবারগুলো এই সময় অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
- অনেক সময় মুখে কিংবা ঠোটের ভেতরের দিকেও গুটি বের হতে পারে। তাই শিশুরা খেতে বা গিলতে অনেক সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে শিশুকে খাবার নরম করে খাওয়াতে হবে। জাউ ভাত খাওয়ালে শিশুরা এই সময় ভালোভাবে খেতে পারবে।
- মুখের ব্যথা বা ঝাল কমাতে হলে এক চামচ এন্টাসিড সিরাপ পানিতে মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে দিন। এতে করে মুখে আরাম হবে।
- শরীর এইসময় অনেক বেশি পরিমাণে চুলকাতে থাকে। তাই নিমপাতা হালকাভাবে শরীর একটু লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে একটু আরাম হবে।
- কোনভাবেই শিশুকে ফুঁসকুড়ি খুটতে দেওয়া যাবেনা।
- ত্বকে যাতে কোনভাবেই ব্যাকটেরিয়ার সমক্রমণ না হতে পারে সেদিকে আলাদা নজর দিতে হবে।
- ব্যথা কমার জন্য চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়াতে পারেন।
মধু
দিনে
দুই থেকে তিনবার আক্রান্ত স্থানে মধু লাগান। ২০-২৫ মিনিট রেখে হালকা উষদুষ্ণ গরম
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নিমপাতা
চুলকানি
আর জ্বালা সারাতে নিমপাতা বেটে লাগান। এটা দিনে অন্তত দুবার লাগাতে হবে, যত দিন না
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত পুরোপুরি সেরে যায়।
নারিকেল তেল
নারকেল
তেল হালকা গরম করে সারা গায়ে মালিশ করুন। এতে জ্বালা-যন্ত্রণা অনেকটাই কমবে।
ওটমিল
এক
বালতি পানিতে এক কাপ ওটমিল মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ওই পানি দিয়ে রোগীকে গোসল
করান। চুলকানি ও জ্বালাভাব কম হবে।
ফলের রস
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা
জলবসন্ত হলে দিনে অন্তত তিন গ্লাস ফলের রস খান।
বেকিং সোডা
এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা
মিশিয়ে তাতে গামছা ভিজিয়ে সারা শরীর মুছে দিন। এতেও চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা
জলবসন্তর সময় জ্বালাভাব কমবে।
ভেষজ চা
পূর্ণ বয়স্ক মানুষদের চিকেন পক্স
(Chicken Pox) বা জলবসন্ত হলে তারা ভেষজ চা পান করুন। চায়ে সামান্য মধু, দারুচিনি
ও লেবু মেশাতে পারেন।
লাল চন্দন
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্তর
সময় শরীরে লাল লাল গোটা বেরোয়। তার ওপর লাল চন্দনের প্রলেপ লাগিয়ে দিন। খুব
তাড়াতাড়ি র্যাশ সেরে যাবে।
চিকেন পক্স (Chicken Pox) বা জলবসন্ত
কিছু ব্যপারে সতর্ক হলে রোগীর জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় এবং
সংক্রমন প্রতিরোধ করা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এবং
অসুস্থ্য বা শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তির ক্ষেত্রে,
বেশি
সতর্কতার
প্রয়োজন
আছে
এবং
অবশ্যই
চিকিৎসকের
সাথে
পরামর্শ
করতে
হবে।
কোন
ধরনের
ওষুধ
ব্যবহারের
পূর্বে
অবশ্যই
চিকিৎসকের
পরামর্শ
নিতে
হবে।
0 comments: